ধনীদের তালিকায় আবার এগোলেন গৌতম আদানি
হিনডেনবার্গ প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রায় ৮ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের সম্পদমূল্য হারিয়েছেন আদানি। তাতে তিনি বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ ধনী থেকে নেমে এসেছেন ৪০ নম্বরে।
টানা কয়েক দিন গৌতম আদানির সম্পদমূল্য কমার পর গতকাল কিছুটা ছেদ পড়ল। গতকাল তাঁর সম্পদমূল্য কমেনি, বরং দিন শেষে দিন শেষে বেড়েছে ১৭০ কোটি ডলার। ফলে ফোর্বস ম্যাগাজিনের ধনীদের তালিকায় ৩৪ তম স্থানে উঠে এসেছেন তিনি। আগের দিন তাঁর অবস্থান ছিল ৪০ তম।
হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশের পর আদানি গোষ্ঠীর রক্তক্ষরণ চলছেই। গত এক মাসে আদানি গোষ্ঠীর বাজার মূলধন ১৪ হাজার কোটি ডলারের বেশি কমে গেছে। অথচ অনেক কোম্পানির সর্বমোট বাজার মূলধনও এতটা নয়।
আজ সকালে ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিনে ধনীদের তালিকায় গৌতম আদানির অবস্থান ৩৪ তম। সম্পদমূল্য ৩৫ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৫১০ কোটি ডলার।
হিনডেনবার্গ প্রতিবেদনের আগে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে ছিলেন আদানি। হিনডেনবার্গ প্রতিবেদনের পর গত এক মাসে তাঁর সম্পদমূল্য কমেছে প্রায় ৮ হাজার ৩৯০ কোটি ডলার।
হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এক দশক ধরে জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে আদানি গোষ্ঠী। তার ওপর ভর করে গৌতম আদানির সম্পদও ফুলেফেঁপে ওঠে। বিশেষ করে গত দুই বছরে আদানির সম্পদমূল্য বিপুল হারে বেড়েছে।
ফোর্বস-এর তথ্যানুসারে, ২০২০ সালে গৌতম আদানির ব্যক্তিগত সম্পদমূল্য ছিল ৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ৮৯০ কোটি ডলার। আর ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি হিনডেনবার্গের প্রতিবেদন প্রকাশের সময় তাঁর সম্পদমূল্য ছিল ১১৯ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার।
হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, মরিশাসসহ বিভিন্ন দেশে ভুয়া কোম্পানির মাধ্যমে বেআইনিভাবে শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে গৌতম আদানির সম্পদমূল্য ফুলেফেঁপে ওঠে। তাঁর ভাই বিনোদ আদানির মাধ্যমে এসব কারসাজি হয়েছে। এমনকি আম্বুজা সিমেন্ট ও অ্যাসোসিয়েটেড সিমেন্ট কোম্পানি (এসিসি) কেনার পর খোলাবাজার থেকে শেয়ার কিনতেও ভুয়া কোম্পানিগুলোর পুঁজি ব্যবহৃত হয়েছে।
হিনডেনবার্গের দাবি, আদানি সাম্রাজ্যের বিস্তার মূলত ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের (গত সেপ্টেম্বরে ২ দশমিক ২৬ লাখ কোটি রুপি) ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
এদিকে হিনডেনবার্গ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে আদানি গোষ্ঠী। আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বিশ্লেষকেরা বলছেন, আদানির কোম্পানিগুলোর যে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসায়িক চুক্তি আছে, তাতে আপাতত নগদের জোগান এবং ঋণ পরিশোধে সমস্যা হওয়ার শঙ্কা কম। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে এরই মধ্যে বড় অঙ্কের বেশ কিছু ঋণও আগেভাগে শোধ করেছে তারা।
আদানি গোষ্ঠীকে যুক্তরাষ্ট্রের এনরনের সঙ্গেও তুলনা করছেন অনেকে। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ জ্বালানি সরবরাহকারী কোম্পানি এনরনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, ঋণের অঙ্ক কম দেখিয়ে এবং ব্যবসায়িক ক্ষতি লুকিয়ে হিসাবের খাতায় বড় অঙ্কের মুনাফা দেখিয়েছিল তারা।
কোম্পানির মুনাফা বা আর্থিক প্রতিবেদন শেয়ারবাজারে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হিসেবে স্বীকৃত। কারণ, এসব তথ্য শেয়ারের দাম প্রভাবিত করে। এনরনের আর্থিক কারসাজির ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর কোম্পানিটির শেয়ারের দামে বড় ধরনের দরপতন হয়। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এনরনকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়। আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর মাসখানেক ধরে ধারাবাহিকভাবে তাদের শেয়ারদর কমছে। তাই অনেকেই আদানির সঙ্গে এনরন কেলেঙ্কারির মিল খুঁজছেন।
ভারতে বিরোধীদের সমালোচনা
আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠার পর থেকেই ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সরব। গতকালও সংসদে সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক অবস্থান নেয় কংগ্রেস। বিদেশে ভুয়া কোম্পানি খুলে বেআইনি লেনদেনের মূল হোতা যে গৌতম আদানির ভাই বিনোদ আদানি, সেই অভিযোগ তুলে তাদের প্রশ্ন, এ বার অন্তত ঘটনার তদন্ত হবে কি? খবর ইকোনমিক টাইমসের।
ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছে, মোদি জমানায় তাদের দলগুলোর বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডি-র মতো তদন্তকারী সংস্থা অতি সক্রিয়। আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পর তাই বারবার মোদির সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতার প্রসঙ্গ তুলে তদন্তের দাবি তুলতে শুরু করেন তাঁরা। এমনকি ইডি, সিবিআইয়ের মতো সংস্থা হাত গুটিয়ে বসে আছে কেন, তারও সমালোচনা করা হয়েছে।
এর মধ্যে আদানি গোষ্ঠী মার্চের মধ্যে তাদের শেয়ার বন্ধক রেখে ৬৯-৭৯ কোটি ডলারের ঋণ শোধ করার পরিকল্পনা করেছে বলে ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে। এর আগেও আদানিরা আগাম ঋণ পরিশোধ করেছে বলে জানা গেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রশ্নও ওঠে, আচমকা আগাম ঋণ পরিশোধের অর্থ তারা পাচ্ছে কোথায়। আর সেই অর্থ যদি তাদের থাকে, তা হলে ঋণ নেওয়া হলো কেন?
বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে ভারতের বিরোধী দলগুলোর একাংশ। বিশেষ করে আদানি গোষ্ঠীর বেশির ভাগ কোম্পানি শেয়ার দর যেখানে বিরামহীনভাবে কমছে, সেখানে তাদের এই আগাম ঋণ পরিশোধের ঘটনায় এই সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।