সামনে ছুটিতে পড়ে দেখতে পারেন বিল গেটসের পছন্দের ১০ বই
অনেকেই মনে করেন, বড়লোক হতে হলে স্রেফ টাকার পেছনে ছুটতে হবে। অন্য কিছুতে মন দেওয়া যাবে না। অথচ বিশ্বের শীর্ষ ধনীরা কিন্তু বলেন অন্য কথা। যেমন বিল গেটস। এখনো বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ ধনী। নিট সম্পদের পরিমাণ ১১৬ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। তবে জানাশোনার বিচারেও তিনি কম যান না। তাঁকে বলা হয় বিশ্বের অন্যতম সেরা মগজের অধিকারী। তাঁকে নিয়ে নেটফ্লিক্সের বানানো প্রামাণ্যচিত্রের নামই দেওয়া হয়েছে ‘ইনসাইড বিলস ব্রেন: ডিকোডিং বিল গেটস’। পড়ুয়া হিসেবেও তিনি বেশ পরিচিত। জেনে নিন তাঁর পছন্দের ১০ বইয়ের নাম।
আমর টোলেসের ‘আ জেন্টলম্যান ইন মস্কো’
মার্কিন ঔপন্যাসিকের বইটি পাঠককে নিয়ে যায় ১৯২২ সালের রাশিয়ায়। যখন রুশ বিপ্লবের পর ক্ষমতায় বলশেভিকরা। তাদের বিচারে গৃহবন্দী হন একজন বনেদি ভদ্রলোক। নাম কাউন্ট আলেকসান্দার রস্তভ। যে মানুষটা জীবনে কুটোটি পর্যন্ত নেড়ে দেখেননি, তাকেই এখন হোটেলে কাজ করতে হয়। নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেন কাউন্ট। তাকে নিয়েই গল্প। পড়ে রীতিমতো কেঁদেছিলেন বিল গেটস।
ভাকলাভ স্মিলের ‘গ্রোথ: মাইক্রোঅর্গানিজমস টু মেগাসিটিজ’
বইটির চেক-কানাডিয়ান লেখক ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ইমেরিটাস প্রফেসর। প্রকাশ করেছে এমআইটি প্রেস। ক্ষুদ্র প্রাণী থেকে শুরু করে সভ্যতা ও নগর—বিশ্বের সবকিছু কীভাবে বেড়ে উঠছে, বইতে এটাই আলোচিত হয়েছে। জটিল বইটি নিয়ে বিল গেটস নিজেই লিখেছেন, কিছু কিছু অংশ ভীষণ লম্বা আর প্রকৌশল নির্দেশিকার মতো জটিল।
ভাকলাভ স্মিলের ‘হাউ দ্য ওয়ার্ল্ড রিয়েলি ওয়ার্কস’
মানবজাতির টিকে থাকা ও সমৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সাতটা ক্ষেত্র নিয়ে এই বইটাতে আলোচনা করেছেন স্মিল। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হলো শক্তি ও খাদ্য উৎপাদন। স্মিল ভীষণ পছন্দের লেখক হলেও তিনি এত বেশি তথ্য ব্যবহার করেন যে বিল গেটস নিজেই লিখেছেন, ‘তার লেখার ধরন সবার জন্য নয়।’
জাপানিজ-ব্রিটিশ এই সাহিত্যিক জিতেছেন বুকার পুরস্কার। এমনকি চিত্রনাট্যের জন্য অস্কার মনোনয়নও পেয়েছেন। তবে বইটির জন্য নয়। এই সাই-ফাই উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট ভবিষ্যতের এক ডিস্টোপিয়ান সমাজ। যেখানে পড়াশোনায় ভালো করার জন্য জেনেটিক্যালি কিছু শিশুর উৎকর্ষ সাধন করা হয়। আর সঙ্গী হিসেবে তাদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় কিছু রোবট। ক্লারা এমনই এক রোবট। গল্পটা সেই বর্ণনা করেছে।
পল স্ট্র্যাথার্নের ‘মেন্ডেলিয়েভস ড্রিম’
বইটি রুশ বিজ্ঞানী দিমিত্রি মেন্ডেলিয়েভকে নিয়ে। ১৯৬৯ সালে তিনি পর্যায় সারণি আবিষ্কার করেন। আর এটাই এখন হয়ে উঠেছে রসায়নের ভিত্তি। এ বিষয়ে ডায়েরিতে লিখেছিলেন, তিনি নাকি স্বপ্নে এমন একটা সারণি দেখেছিলেন। আর ঘুম থেকে উঠেই তা কাগজে টুকে রাখেন। সেই গল্পের সূত্র ধরে স্ট্র্যাথার্ন পাঠককে ঘুরিয়ে আনেন রসায়নের পুরো ইতিহাস। প্রাচীন দর্শনের গল্প থেকে অণু বিশ্লিষ্ট করা পর্যন্ত।
রবার্ট হাইনলেইনের ‘স্ট্রেঞ্জার ইন আ স্ট্রেঞ্জ ল্যান্ড’
পল অ্যালেনের সঙ্গে বিল গেটসের বন্ধুত্বের অন্যতম উপাদান এই মার্কিন সাই-ফাই লেখক। তারপর দুজনে মিলে মাইক্রোসফট বানিয়ে বদলে দেন পৃথিবীরই ইতিহাস। সেই হাইনলেইনের অন্যতম সেরা উপন্যাস এই বই। নায়ক ভ্যালেন্টাইন মাইকেল স্মিথের জন্ম ও বেড়ে ওঠা মঙ্গলে। পরে পৃথিবীতে এসে প্রচার করেন নতুন ধর্ম। যাতে অবাধ ভালোবাসা আর যূথ জীবনের ওপরে জোর দেওয়া হয়েছে।
বনোর ‘সারেন্ডার’
ইউটু ব্যান্ডের এই গায়ককে কমবেশি সবাই ভালোবাসে। তবে বিল গেটস বোধ হয় একটু বেশিই বাসেন। বনোর সংগঠন ওয়ান-এর অন্যতম পৃষ্ঠপোষক তার গেটস ফাউন্ডেশন। ফলে বনোর আত্মজীবনী তাঁর প্রিয় বইয়ের তালিকায় থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। যেটাতে এই গায়ক তুলে ধরেছেন তাঁর ডাবলিনের শুরুর দিনগুলোর সংগ্রাম থেকে এখনকার দারিদ্র্য ও এইডসের বিরুদ্ধে সংগ্রামের গল্প।
ডরিস কেয়ার্নস গুডউইনের ‘টিম অব রাইভালস’
পুলিৎজারজয়ী লেখকের বইটি মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের জীবনী। তাতে এসেছে লিঙ্কনের ক্ষমতায় উঠে আসার গল্প। ১৮৫০ ও ১৮৬০-এর দশকজুড়ে মার্কিন রাজনীতি ছিল টালমাটাল। সে সময় লিঙ্কনের উত্থান হয় মূলত অন্যদের মনোভাব ঠিকঠাক বোঝার দারুণ ক্ষমতার জন্য। বইটি অবলম্বনেই পরে নির্মিত হয় চলচ্চিত্র ‘লিঙ্কন’।
মেলিস ডি কেরাঙ্গালের ‘দ্য হার্ট’
উপন্যাসটি স্রেফ ২৪ ঘণ্টার গল্প। তিন বন্ধু গিয়েছিল সার্ফিংয়ে। ফেরার পথে তাদের একজন মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা পড়ে। তাকে নিয়ে পরিবারে শুরু হয় টানাপোড়েন। তার হৃৎপিণ্ডটা অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপন করতে দেওয়া হবে কি না, এই নিয়ে টানাপোড়েন। ফরাসি এই সাহিত্যিকের বইটি সম্পর্কে বিল গেটস লিখেছেন, ‘উপন্যাসের ছদ্মবেশে লুকানো কাব্যগ্রন্থ।’ অবশ্য কেবল তিনিই নন, বইটি সম্পর্কে লিখতে গিয়ে অনেক সাহিত্য সমালোচকই একে ‘কাব্যধর্মী’ বলেছেন।
টিমোথি গ্যালওয়ের ‘দ্য ইনার গেম অব টেনিস’
ক্রীড়া মনোবিজ্ঞানের অন্যতম সেরা বই। প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। তাতে গ্যালওয়ে দিয়েছেন সম্পূর্ণ নতুন এক তত্ত্ব। টেনিস খেলার সময় একজন আসলে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে লড়ে। একজন বিপরীত কোর্টে দাঁড়ানো তার প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়। আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী থাকে মাথার ভেতরে। আসে উদ্বেগ ও আত্মবিশ্বাসহীনতার রূপ ধরে। তখন এটা ছিল সম্পূর্ণ নতুন ধরনের একটা ভাবনা।